ই-কমার্স কি? ই-কমার্স ব্যবসায় নারী উদ্দ্যোক্তাদের সম্ভাবনা সবাই ই-কমার্স এর মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্দ্যোক্তা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে অনলাইন বিজনেসগুলো গড়ে উঠেছে তার প্রায় সবই ই-কমার্স ব্যবসায় নারী উদ্দ্যোক্তাদের হাত ধরে। প্রতিটা মেয়েই চায় নিজে স্বাবলম্বী হতে। ছেলেদের মতো তারাও চায় তাদের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নগুলো কে বাস্তবে রূপ দিতে।
কিন্তু ১৮ বছর পেরুলেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাক্সিমাম মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তখন তাদের স্বপ্নগুলো যেনো আকাশ কুসুম কল্পনায় পরিনত হয়। তখন সংসার সামলিয়ে জব করা যেনো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। আবার কেউ কেউ তো বিয়ের পর নারীদের চাকরি করতে দিতেও নারাজ।
মুলত, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন নারীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন অনেকটাই টাফ। কিন্তু এই কথাগুলো এখনকার নারীরা শুনলে হাসবে কারণ এই কথাগুলো ঊনবিংশ শতাব্দীতে বললে মানাতো। এখন যেসব নারীদের রয়েছে অদম্য ইচ্ছাশক্তি তারা চাইলেই সেই ইচ্ছাশক্তি দ্বারা অসম্ভব কে সম্ভব করতে পারে।
কারণ এখন নেট দুনিয়ায় সব সম্ভব। বাংলাদেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এবং ২০০৪ সাল থেকে ফেসবুকের যাত্রা শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের অনলাইন বিজনেসগুলো যেন হয়ে উঠেছে অনেক রমরমা। এখন মেয়েরা আর কেউ বসে নেই। সবাই ই-কমার্স এর মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্দ্যোক্তা হচ্ছে।
সার্ভে করলে দেখা যাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে অনলাইন বিজনেসগুলো গড়ে উঠেছে তার প্রায় সবই নারী উদ্দ্যোক্তাদের হাত ধরে। আজ আমরা জানব ই-কমার্স কি এবং কোন কোন সেক্টরে নারী উদ্দ্যোক্তা দের ব্যবসার সম্ভাবনা অনেক।
ই-কমার্স কিঃ
ই-কমার্স এর ফুল ফর্ম হচ্ছে ইলেকট্রনিক কমার্স। এই কথা টা ছোট থেকে বড় আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আজ আমি ই-কমার্স এর সংক্ষিপ্ত কিন্তু বেসিক বিষয়বস্তু আলোচনার মাধ্যমে আপনার ই-কমার্স সম্পর্কে ধারণা টা কে আরও পাকাপোক্ত করতে যাচ্ছি।
ই-কমার্স হলো এমন একটি বিজনেস প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি ইলেকট্রনিক সিস্টেম ব্যবহার করে আপনার পণ্য বা সেবা কাস্টমার এর কাঁছে বিক্রয় করতে পারবেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ইলেকট্রনিক সিস্টেম বলতে আপনার ব্যবহৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক অথবা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কে বোঝানো হয়েছে। ই-কমার্স বললেই আমরা অনলাইনে কেনাকাটা কে বুঝি কিন্তু এর কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে। যেমনঃ-
বিজনেস টু বিজনেস ( B2B ):
সাধারণত বড় বড় দুই বা ততোধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই ধরনের ব্যবসা পরিচালিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশের ৮০% ই-কমার্স এই সিস্টেম এর অন্তর্ভুক্ত।
বিজনেস টু কনজিউমার ( B2C):
ই-কমার্স বললেই আমাদের মাথায় যেটা আসে সেটাই হলো বিজনেস টু কনজিউমার। এখানে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বা সেরা সরবরাহ করে থাকে।
কনজিউমার টু কনজিউমার (C2C):
এখানে কোনো গ্রাহক বা ভোক্তা একটি পণ্য B2C ওয়েতে পাইকারি মূল্যে ক্রয় করার পর তা অন্য গ্রাহকের নিকট খুচরা মূল্যে বিক্রয় করে থাকে।
ই-কমার্স ব্যবসায় নারী উদ্দ্যোক্তাদের সম্ভাবনাঃ
নেট দুনিয়ায় নারী উদ্দ্যোক্তা দের কাস্টমারদের কাঁছে অ্যাপ্রোচ করা এখন হয়ে গেছে আরও সহজ। Women entrepreneurs নিয়মিত ফেসবুক লাইভ এর মাধ্যমে অথবা ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে তার বিজনেস টা কে আরও সবার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছে।
Women entrepreneurs কে আরও উৎসাহিত করার জন্য এখন জেলায় জেলায় নারীদের নিয়ে ই-কমার্স বিজনেস এর উপর ট্রেনিং করানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এ ই-কমার্স বিজনেস এর উপর একটি দিবস ও ২০১৫ সালের পর থেকে প্রতি বছর পালন করা হচ্ছে৷ আপনি জেনে খুশি হবেন যে, ৭-ই এপ্রিল কে সরকার ই-কমার্স দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
যেসব নারী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাচ্চা, সংসার সামলিয়ে জব করতে পারছে না তারা ঘরে বসেই কাজ করার তাগিদে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম কে বেঁছে নিয়েছে। এখানে তারা তাদের বিভিন্ন কাজ কে ফুঁটিয়ে তুলতে পারে। যে নারী সেলাইয়ের কাজ নিঁপূনভাবে করতে পারে সে বুটিক শপ খুলতে পারে,
যে কেক বানাতে পারে সে জন্মদিনে কেক সাপ্লাই দিতে পারে। এরকম হাজারো ক্যাটাগরিতে নারী উদ্দ্যোক্তা রা তাদের কাজের পারদর্শীতা দেখাচ্ছে। নিচে কিছু ক্যাটাগরি তুলে ধরা হলো যেটা কে কেন্দ্র করে নারীরা কাজ করতে পারবে।
শখের রান্নাটা যখন ব্যবসাঃ
এমন কোনো মেয়ে নেই যার রান্না করা পছন্দ না। আর আপনার রান্না টা যদি হয় অসম্ভব সুস্বাদু তাহলে ই-কমার্স বিজনেস হিসেবে আপনার রান্না কে-ই বেঁছে নেওয়া উচিত। আমাদের জেলায় এমন অনেক নারী উদ্দ্যোক্তা রয়েছে যারা ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুলে তাদের হোম মেড খাবার সবাইকে সাপ্লাই দিচ্ছে। তাদের গ্রাহকদের সংখ্যা কিন্তু কম নয়।
যারা ব্যাচেলর, হোস্টেলে থাকে তারা চায় টাকার বিনিময়ে হলেও একটু বাড়ির খাবারের স্বাদ পেতে। আবার ছোট খাটো পার্টিতে ও অনেকে বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে লোকাল কাস্টমাররা বেশি প্রাধান্য পায়।
আবার বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত, অনেকেই আছে শখ করে কেক বানায়। তাতে আবার নিজের মনের মতো করে ডেকোরেশন করে। বর্তমানে কাস্টমাইজড কেক সবাই পছন্দ করে এবং এর চাহিদা ও দিন দিন বাড়ছে। তাই আপনার শখ যদি কেক বানানো হয় তাহলে আপনার এটা নিয়েই আগানো উচিত।
হাতে করা পেইন্টিংঃ
বর্তমানে কাপল শাড়ী-পাঞ্জাবী অনেক বেশি সেল হয়। আর আপনি যদি পেইন্টিং করতে পছন্দ করেন তাহলে যে কোনো সিম্পল শাড়ি কিংবা পাঞ্জাবি কে আপনি আপনার রঙ তুলির সাহায্যে অনেক আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। বর্তমানে পেইন্টিং শাড়ি, পাঞ্জাবির গলায় রঙ, তুলি দিয়ে ফুলের সাঁজ অনেক পাবলিসিটি পেয়েছে।
বুটিক শপঃ
আমার চারপাশে অনেক পরিচিত মেয়ে আছে যারা খুব সুন্দর হাতের কাজ পারে। তারা তাদের এই গুন কে পুঁজি করে একটি অনলাইন বুটিক শপ খুলেছে। যার নাম দিয়েছে শখের বুটিক শপ। হাতের কাজের পোশাক অনেক আগের জেনারেশন থেকে এখন পর্যন্ত ও স্থান দখল করে রেখেছে। তাই আপনার নিজ হাতে করা শাড়ি, বেড শিট, থ্রি পিচ, কুশন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ই-কমার্স বিজনেস শুরু করুন।
হাতে বানানো গহনাঃ
বাংলাদেশের এমন কোনো মেয়ে নেই যে গহনা পড়তে পছন্দ করে না। মেয়েরা সব সময়-ই শৌখিন, তারা সব সময় চায় নিজেকে সাঁজিয়ে রাখতে। তাই তারা সব সময় চোখ রাখে সোশ্যাল মিডিয়ায় কখন লেটেস্ট মডেল এর গহনা বের হবে। তারা দামে কখনো কার্পণ্য করে না বরং সবার থেকে সাঁজগোঁজে এগিয়ে থাকতে বেস্ট প্রোডাক্ট টি ক্রয় করে।
তাই আপনি যদি সুন্দর করে মাটির অথবা ফুলের গহনা বানাতে পারেন, এটা কে ই-কমার্স এর মাধ্যমে খুব ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। পহেলা বৈশাখে বাঙালিরা ওয়েস্টার্ন ড্রেস নয় বরং শাড়িকেই বেশি প্রেফার করে। আর এ দিনে তরুণীরা মাটির তৈরি গহনা বেশি পড়ে। আবার গায়ে হলুদে ফুলের তৈরি গহনা না হলে কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। তাই আপনি লেটেস্ট মডেলের গহনা তৈরির মাধ্যমে হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল নারী উদ্দ্যোক্তা।
উপরে আমার উল্লেখিত যে কোন আইডিয়া আপনি বেঁছে নিতে পারেন। বর্তমানে এগুলোর মার্কেট অনেক হাই।
ই-কমার্স ব্যবসায় বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ ও সম্ভাবনা
ই-কমার্স এখন অনেক বেশি চাহিদাপূর্ণ অনলাইন ব্যবসার মাধ্যম। ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রায় অনেক বেকার মানুষ ই তাদের নিজেদের কর্মসংস্থান করতে পারছেন ঘরে বসেই। ই-কমার্স ব্যবসা করে এখন অনেক বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা এবং পুরুষ উদ্যোক্তা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
ঘরে বসেই আসলে যতোটা শুনতে সহজ ঠিক তেমন ই এখানে কায়িক পরিশ্রম আছে , আছে মানসিক। সবচেয়ে বড় যে পরিশ্রম সেটা হলো কৌশলগত পরিশ্রম। আপনি দিনের পর দিন কোনো কাজে পরিশ্রম দিয়েই যাচ্ছেন কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছেনা।
অন্যদিকে কেউ কম সময়ে পরিশ্রম করে আশানুরূপ ফলাফলের চাইতে অধিক পরিমাণে লাভ পাচ্ছেন। কারণ তাদের অধ্যবসায় আর কৌশলগত পরিশ্রম। রণক্ষেত্রে নামার আগে সেনাপতিকে চিন্তা করতে হয় কিভাবে সে ময়দানে লড়াই করবে আরময়দানে টিকে থাকবে। কারণ আপনাকে সবসময় মনে রাখতে হবে টিকে থাকার লড়াইটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ ও সম্ভাবনাঃ
আপনি যদি সবসময় লাভ এর চিন্তা শুরু থেকেই করেন তাহলে আপনার ই ক্ষতি। এজন্য চিন্তা করতে হবে টিকে থাকার ব্যাপারে আর পাশাপাশি নিজের দলের মানুষকেও সন্তুষ্ট রাখা। পুরুষরা শুরু থেকেই কাজ করছেন সংসার, সমাজ এবং জাতিগত অগ্রসরতার কাজে। পুরুষের ভূমিকা সব কর্মক্ষেত্রেই বিদ্যমান।
কিন্তু বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট সুলভ হওয়াতে এবং শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় নারীরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নাই। নারীরাও এখন কর্পোরেট জব, ব্যাংকিং জব, শিক্ষাগত কাজ, ফাইন্যান্স, একাউন্টিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর মত কঠিন কাজ গুলিতেও নিজেদের অপরিসীম ভূমিকা রাখছেন।
এমন কি অনেক জব সেক্টরে ডিপার্টমেন্ট মূল দায়িত্বে আছেন অনেক নারী। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী উদ্যোক্তা। কিন্তু অনেক নারী আছেন যারা সংসারের ব্যাস্ততায় বা নিজের ছেলে-মেয়ে কে লালন পালন করতে গিয়ে জব করতে পারেন না। এজন্য তারা অনেকেই টুকিটাকি অনেক দক্ষতাপূর্ণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে চান যেখানে সময় দিতে পারেন বাসায় বসেই।
অনেক প্রতিভাবান নারী আছেন যারা তাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং করে বা বিজনেস স্টাডিজ বা আর্টসে বা চিকিৎসা এর মত বিষয়ে। কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে হোক বা নিজস্ব কারণেই হোক নারীরা অনেকেই আর জবে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন না।
এসময় তারা ঘরে বা সংসারেই নিজেকে নিয়োজিত করেন। এসময় নারীরা নিজেদের অবসর সময় কে কাজে লাগাতে চান অনেকেই। তারা এমন কিছু কাজেই নিজেকে নিয়োজিত করতে চান যাতে তার কাজ সমূহের জন্য ঘরের বাইরে সময় কম দিতে হয় আর বেশির ভাগ সময় ঘরের মাঝেই নিজের কাজগুলিকে বিকশিত করতে পারেন। বর্তমান বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তার সুযোগ ও সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বর্তমানে সবচেয়ে সহজ যে কাজ গুলি হচ্ছে ঘরে বসে থাকার সেটি হলো ই-কমার্স ব্যবসা। দিন দিন নারীদের ঘরে বসে কাজ করার প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় বহু নারী ই-কমার্স ওয়েব সাইট বানিয়ে নিয়ে সেখানে নিজের সহ আরো অনেক নারীকে নিয়ে পরিচালনা করছেন ই-কমার্স ব্যবসা।
তবে অনেকেই খুজতে থাকেন এমন ব্যবসা যা মার্কেটে তুলনামূলক চাহিদা বেশি। কিন্তু চাহিদাপূর্ণ ব্যবসাতে বিনিয়োগ করলেই যে সফলতা আসবে এমন কোনো মানে নেই। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে মার্কেট সম্পর্কে। মার্কেট এনালাইসিস করতে শিখতে হবে।
জানতে হবে কোন প্রোডাক্ট এর চাহিদা বাজারে কেমন আর কোন প্রোডাক্ট এর কম্পিটিশন তুলনামূলক কম। কারণ যে পণ্য যত বেশি এভাইলেবল বাজারে সে পণ্য বিক্রয় করতে ততো বেশি পরিশ্রম আপনার।
নারী উদ্যোক্তা বলতে কি বুঝঃ
একবার হলেও হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন চলে আসবে যে, নারী উদ্যোক্তা কি? একজন নারী যখন নিজের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে কোন জব বা কারো অধীনস্থ না থেকে নিজেই যদি কোন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার চেষ্টা করেন বা পরিকল্পনা করেন তখন তাকে নারী উদ্যোক্তা বলা হয় ।
ব্যবসায় উদ্যেক্তার উদ্যোগ যখন সফল কিংবা স্বনির্ভর হয় তখন তাকে বলা হয় ব্যাবসায়ী । একজন নারী উদ্যোক্তা ব্যাবসায়ী তার ব্যাবসায়িক জীবনের সবচেয়ে কঠিন এবং গুরত্বপূর্ণ সময় একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কঠোর মনোবল , উদ্যাম প্রাণশক্তি ও আত্ববিশ্বাসকে সঙ্গী করে শত বাধা পেরিয়ে একজন আত্বনির্ভরশীল ব্যাবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যান।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য মার্কেট এনালাইসিসঃ
মার্কেট এনালাইসিস করতে পারেন আপনার জায়গা বুঝে ও চাহিদা বুঝে। আপনার আশেপাশের কর্মদক্ষ মানুষের ইচ্ছা বুঝে। এ ক্ষেত্রে আরো সহজে আপনি চিন্তা করতে পারেন সমাজের মানুষের বয়স বুঝে। যেমন ১৪ থেকে ১৭ বছর এর কিশোরদের চাহিদা একরকম। আবার ১৮ বছর থেকে শুরু করে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের এক রকম চাহিদা। আবার ২৬ বছর থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবক যুবতীদের এক রকম চাহিদা। অন্যদিকে ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী, ৪৬ থেকে ৫৫ এবং ৫৬ থেকে চলমান সকলের চাহিদা একেক রকম হয়।
বয়সের বিষয় আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখা লাগবে যদি আপনি কৌশলগত চিন্তাশীল হতে চান। বয়সের পাশাপাশি আপনাকে স্থান, কাল পাত্র, সংস্কৃতি অবশ্যই ভাবতে হবে। আপনি যদি রাজশাহী শহরে চান অনলাইনে আম এর ব্যবসা করতে সে ক্ষেত্রে কিছুটা আপনার জন্য রিস্ক হতে পারে কারণ রাজশাহী শহর থেকেই আম সরবরাহ হয় সারা দেশে।
এজন্য খেয়াল করতে হবে আপনি আপনার যে প্রোডাক্ট নিয়ে ভাব্বেন সেটি যেখানে বিক্রয় করতে চাইবেন সেখানে যেনো অনেক চাহিদা পূর্ণ হয়ে থাকে। নারী উদ্যোক্তাদের অবদান বাড়বে এমন এনালাইসিস যদি তাদের টার্গেট কাস্টোমারদের জন্য করতে থাকে।
চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু পণ্য সম্পর্কে। আপনি সহজেই বিক্রি করতে পারেন আপনার ই-কমার্স সাইট থেকে যা বাজারে অধিক চাহিদাপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতা তুলনামূলক কম।
মাশরুম ব্যবসাঃ
নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য মাশরুম একটি অন্যতম একটি পণ্য । গৃহবধূ থেকে শুরু করে চাকুরি করছে এমন নারীরা পারিবারিক কাজের পাশাপাশি মাশরুম চাষ করতে পারেন । একই সাথে অনায়াসে কিছু বাড়তি আয় করতে পারে।
মাশরুম একটি বিজ্ঞানসম্মত খাবার, তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় এটি ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত। তবে দিন বদলে গেছে।
ব্যাঙের ছাতা ঢাকা শহরের বেশ ভালোমানের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে বর্তমানে পাওয়া যায়। ব্যাঙের ছাতা নামে যেটি সকলে চেনে সেটি আসলে এক প্রকার বিষাক্ত ছত্রাক যা বন জংগলে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জন্ম নেয়। তবে খাবার হিসেবে যে মাশরুম পাওয়া যায় সেটিও কিন্তু দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতই।
কিন্তু এটি পরিষ্কার পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ভেষজগুণে ভরপুর ক্লোরোফিলবিহীন উদ্ভিদ, একই সাথে এক প্রকার সবজি। মানুষের কাছে এটি অপরিচিত নাম। আমরা মাশরুমকে “ব্যাঙের ছাতা” বলে অবশ্য চিনি। মূলতঃ মাশরুম গবেষণাগারে উদ্ভাবিত অঙ্কুর বা রেণু দ্বারা পরিষ্কার পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা, সুস্বাদু পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাওয়ার।
এখন বাজারে প্রতিকেজি শুকনো মাশরুম এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে উন্নত দেশে মাশরুমের কদর অত্যন্ত বেশী। এই মাশরুম বাসায় চাষ করে সেটা অনলাইনে বিক্রয় করে নারীরা বেশ ভালোভাবে সাবলম্বী হতে পারেন।
তুলির আঁচড়ে তৈরি হবে কাপড়ঃ
কাপড়ের ব্যবসা অনেক নারী ই করছেন। কিন্তু অভিনব কিছু কায়দা প্রয়োগ করছেন কিছু নারী যেখানে খুব সুলভ মূল্যে কাস্টোমাররাও পাচ্ছেন তাদের হাতে ইউনিক কিছু পণ্য । বহু নারী এখন নিজ হাতে আর্ট করছেন কাপড়ে এবং বিক্রয় করছেন তার কাস্টোমারদের নিকটে। আর্ট করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয় । আর্ট একটা অধ্যবসায় এর ব্যাপার।
একই সাথে আর্ট করতে ইউনিক চিন্তার দরকার পড়ে। খুব সুন্দর ইউনিক ডিজাইন দ্বারা অনেক নারী ডিজাইন করে থাকেন পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ বা শাড়িতে ঈদ, পূজা , পহেলা বৈশাখ , পহেলা ফাল্গুনে। এছাড়াও সাধারণ সময় গুলিতে বিক্রয় করছেন নিজেদের আর্ট করা ডিজাইন ও পণ্য। এতে কাস্টোমাররাও বেশ সুবিধা করতে পারছেন নিজেদের কাজে কর্মে।
গাছ ব্যবসাঃ
গাছের চাহিদা অনেক বেশি বেড়েছে বাসা বাড়িতে। নিজেদের ছাদে অনেকেই এখন গাছ রোপণ করা শুরু করেছেন। অনেকেই সৌখিন আছেন যারা বেশ দামি গাছ রোপণ করতে ভালবাসেন যেমন বনসাই থেকে শুরু করে বেলি, ডালিয়া, কেকরাজ, গেন্ধা, রজনীগন্ধা, কচমচ, রক্ত গোলাপসহ সব ধরণের ফুল গাছের চারা চাষ করে ভালো মূল্যে বিক্রয় করতে পারেন নারীরা।
এভাবে নারীরা খুব কম সময় এর মাঝেই ছাদে চাষ করা যায় এমন কিছু গাছ যা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি নিয়ে সহজেই ব্যবসা করতে পারেন নারীরা।
তাই ঘরে বসে আপনিও শুরু করে দিতে পারেন উপরোক্ত কাজ গুলি আজ ই। হয়ে যেতে পারেন একজন নারী উদ্যোক্তা। অবসর সময় গুলিতে আপনিও পারবেন নিজের পছন্দের কাজ গুলি প্রতিনিয়ত করে ঘরে বসেই উপার্জন করতে। শুরু করে দিতে পারেন আপনার ই-কমার্স ব্যাবসা।
হাতে বানানো গহনা এবং ইমিটেশনের ব্যবসাঃ
বাংলাদেশের নারীদের এক প্রাচীন সৌখিনতা হলো মাটির গহনা আর তামার বানানো জিনিসপত্র। সোনার প্রতি যেমন নারীদের বিশেষ আকর্ষণ থাকে ঠিক তেমনি নারীদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ এখন মাটির গহনা আর ইমিটেশনের জিনিস এর প্রতি। গহনা ছাড়া নারীদের জীবনে সাজসজ্জা অপূর্ণ রয়ে যায়। আটপৌরে জীবনে কিংবা সামাজিক যে কোনো অনুষ্ঠানে গহনা নারীদের অতীব প্রয়োজনীয় অলংকার।
তবে যুগোপযোগী ও নান্দনিকতা থাকা নারীদের জন্য অবশ্যই দরকার। এজন্য পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাঝেই গহনা পেয়েছে নিত্যনতুন চেহারা। রূপা, মুক্তা এই ধরনের গহনাগুলোই বরাবর পছন্দের তালিকার শীর্ষে। ভারী গহনার চেয়ে হালকা গহনাতেই এখন স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। গলায় কিছু সংখ্যক মুক্তা দ্বারা তৈরি একটি মালাতেই আকর্ষণীয় লুক আসে।
শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারীদের দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে কাটাতে হয় এজন্য তারা বেছে নেন হালকা গহনা। এজন্য নারীদের হাতে বানানো গহনার প্রতি বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। কাঠ, পুঁতি, ইমিটেশন দিয়ে তৈরি যে কোনো গহনাও বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। নানা ব্যস্ততায় মার্কেটে গিয়ে ঘুরে গহনা কেনার সময় কম বলে অনেকেরই প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে অনলাইনের নানা পেইজগুলো।
এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তা বানাতে পারেন সুন্দর সুন্দর গহনা । আর অনলাইন মার্কেটিং এজেন্সিদের মাধ্যমে মার্কেটিং করতে পারেন। একই সাথে নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট দিয়ে ক্রেতাদের নিকটে বিক্রয় করে করতে পারেন অনলাইনে ব্যবসা।
ঘরে বসে বানানো খাবার পণ্যঃ
করোনাকালীন সময় থেকে মানুষ হোটেলের খাবার বন্ধ করেছেন। সকলেই চায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এজন্য এখন প্রায় অনেকে বাড়িতে বসেই কাচ্চি, বিরিয়ানি, গরু-খাশির মাংস, পিজ্জা, বার্গার সহ নানা রকম ফাস্টফুড বানিয়ে বিক্রি করছেন।
আর সকলেই জানে বাসা বাড়িতে বানানো খাবার হোটেলের চেয়ে তুলনামূলক বেশি পরিমাণে সুরক্ষিত হয়। এজন্য আপনিও বাসায় খাবার বানিয়ে অনলাইনে বিক্রয় করতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় ঘরে বসে আপনিও শুরু করে দিতে পারেন উপরোক্ত কাজ গুলি। হয়ে যেতে পারেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। অবসর সময় গুলিতে আপনিও পারবেন নিজের পছন্দের কাজ গুলি প্রতিনিয়ত করে ঘরে বসেই উপার্জন করতে। শুরু করে দিতে পারেন আপনার ইকমার্স ব্যাবসা।
একই সাথে নারী উদ্যোক্তার সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে এবং এক কাতারে সকলে কাজ করলে নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা গুলির হবে সমাধান। আর একই সাথে নিজের ওয়েবসাইটে উপরের আইডিয়া অনুযায়ী ব্যবসার মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।
Comments (No)