অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট…

অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট অল্প মূলধনে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বেড়ানোর আগ্রহ, খুঁটিনাটির প্রতি নজর, মানুষের সঙ্গে সংযোগ ও সম্পর্ক তৈরি এবং ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতা এই কয়েকটি গুণ দিয়ে শুরু করা যাবে ট্যুরিজম ব্যবসা।

অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট... 1

বেড়াতে কে না পছন্দ করে। ব্যস্ততার কারণে অনেকেই বেড়ানোর সবকিছুর বন্দোবস্ত করতে পারেন না। আবার অনেকে বুঝতে পারেন না কীভাবে করবেন। তেমনি ঝামেলাও এড়াতে চান। যাতে বেড়াতে গিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়। এ ধরনের মানুষই মূলত দ্বারস্থ হন ট্রাভেল এজেন্সির কাছে।

কীভাবে ব্যবসা করবেন

ট্রাভেল এজেন্সির কাজ হতে পারে ট্রেন ও প্লেনের টিকিট কেটে দেওয়া, হোটেল বুকিং, ট্রাভেল প্যাকেজ বিক্রি অথবা নিজেরাই ট্যুর অপারেট করা। ছোট ট্রাভেল এজেন্সিগুলো একটি বা দুটি পরিষেবা দিয়েই ব্যবসা শুরু করে। যেমন কোনো ট্রাভেল এজেন্ট শুধুমাত্র বাস, ট্রেন ও প্লেনের টিকিটের এজেন্সি নিয়ে সেই টিকিট বিক্রি করেই ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করেন, এর সঙ্গে যোগ হয় হোটেল বুকিং।

কোনো ট্রাভেল এজেন্সি ট্রাভেল প্যাকেজ বিক্রি করে। বেড়াতে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেয়। টিকিটের ব্যবস্থা, হোটেল, খাওয়া দাওয়া, স্থানীয় যাতায়াতসহ সব কিছুর ব্যবস্থা থাকে এই প্যাকেজটির মধ্যে। ক্রেতা পুরো প্যাকেজ কিনে নেন।

অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট... 2

অনেক ক্ষেত্রে  ট্রাভেল এজেন্সির কর্মীকে গাইড হিসেবে অতিথিকে সঙ্গ দিতে হয় না। আবার এমনও  ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা ট্যুর প্যাকেজ তৈরি করে। তারপর তাদের ক্রেতার বেড়ানোর সবকিছুই তারা করবেন এর পাশাপাশি সঙ্গ দেবেন। এসব ক্ষেত্রে একটি বড় ট্যুর গ্রুপ থাকে। তাই ব্যবসা শুরুর আগে স্থির করে নিতে হবে কোন ব্যবসাটা করবেন। 

ট্রাভেল পরিকল্পনা

এই ব্যবসাতে পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে গ্রাহকদের কোন কোন জায়গায় নিয়ে যাবেন। সেই জায়গাটি সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানা থাকা প্রয়োজন। ব্যবসা শুরুর আগে নিজে অন্তত একবার হলেও সেই জায়গাটিতে ঘুরে আসা।

সেখানকার হোটেল মালিকদের সঙ্গে লিখিত বা মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে ঠিক করে নিতে হবে গ্রাহকদের পাঠালে অথবা গ্রাহকদের নিয়ে গেলে তারা কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবেন এবং প্রতিষ্ঠানকে কত শতাংশ ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন দেবেন।

এছাড়াও স্থানীয় পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে গাড়ির বিষয়েও সবকিছু জেনে নিতে হবে। একবার একটি গন্তব্য সম্পর্কে জানা বোঝা স্পষ্ট হয়ে গেলে সেই অনুযায়ী আপনাকে প্ল্যানিং সাজাতে হবে ও সেটা ক্রেতার কাছে সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে হবে।

ট্রাভেল ব্যবসা করতে হলে নিত্যনতুন জায়গার খোঁজ বের করা এবং ট্যুর প্যাকেজ দেওয়া। যাতে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা যায়।

ওয়েবসাইট

ট্রাভেল এজেন্সির নিজস্ব একটা ওয়েবসাইট থাকা জরুরি। যেখানে প্রতিষ্ঠানের সব পরিষেবা সম্পর্কে গ্রাহককে জানাতে পারবে। প্রতিনিয়ত সেটা আপডেট করতে হবে। যে যে ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে সে বিষয়ও বিবরণ দিতে হবে। কোন পরিষেবার জন্য কত খরচ তাও লিখে রাখা।

অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট... 3

ট্রাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করে তোলার সব থেকে ভালো উপায় হলো ট্রাভেল প্যাকেজের বিভিন্ন স্থানের সুন্দর ছবি ব্যবহার করা। যাতে সেই ছবি দেখেই গ্রাহক ট্যুর প্যাকেজ কিনতে চান। শুধু ওয়েসবাইট নয় প্রয়োজনে ফেসবুক পেইজও খুলতে হবে।।

ইউটিউবেও বেরানোর ভিডিও আপলোড দিয়ে ভ্রমণ-ইচ্ছুক মানুষের আগ্রহ বাড়াতে পারেন। আর এভাবেই ব্যবসার পরিচিতি ও পরিধি বাড়বে।

কীভাবে খুলবেন ট্রাভেল এজেন্সি 

অন্য যে কোনো ব্যবসার মতোই ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা খোলার জন্যও কিছু নিয়মকানুন আছে।

কেমন হবে প্রতিষ্ঠান : প্রথমেই ঠিক করতে হবে প্রতিষ্ঠানের ধরন কী হবে? বেশিরভাগ ট্রাভেল এজেন্সি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া অনলাইনে পরিষেবা দেওয়ার জন্যও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি প্রয়োজন।

অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট... 4

তবে ছোট আকারে শুরু করতে চাইলে লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ বা ওয়ান পার্সন কোম্পানি হিসেবে শুরু করা যায়। আর দুই তিনজন নিয়ে প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে সেটা লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠান হবে। প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য ট্রেড লাইসেন্স করাতে হবে। এই লাইসেন্স নেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির নাম ঠিক করে এবং একটি অফিসের ঠিকানা দিতে হবে।

ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স :

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে। লাইসেন্স করার জন্য প্রযোজ্য ফি প্রদান করে লাইসেন্স   নেওয়া। এক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ধরন ভেদে ফি নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও ১৮ বছরের বেশি বয়সের যে কেউ তার ব্যবসায়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন।

অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট... 5

এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন: ভাড়ার চুক্তিপত্র, ভাড়ার রসিদ, তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি। কর পরিশোধের রসিদসহ কর কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করতে হয়।

মনে রাখা জরুরি যে, আপনি ঢাকার যে অঞ্চলের, সে অঞ্চল থেকে ১০/- টাকা বা তার কিছু বেশি দিয়ে আবেদন ফরম নিয়ে উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো এবং ছবি জমা দিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন :

 বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনলাইন সাইট থেকে রেজিস্ট্রেশন ফরম ডাউনলোড করে তা পূরণ করে জমা দিতে হবে। এর সঙ্গে আরও যা যা দিতে হবে : TIN Certificate, ট্রেজারি চালানের মূলকপি, বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইওঘ) (যদি থাকে)। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি (প্রয়োজন হলে), ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত অনুলিপি।

অল্প পুঁজির বড় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্ট... 6

৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা, হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ, ন্যূনতম দশ লাখ টাকা স্থিতির ব্যাংক সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ঠঅঞ জমার ট্রেজারি চালানের মূলকপি, এক্ষেত্রে আবেদন ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো লাগতে পারে।

এটা সাধারণত ব্যবসার পরিধি একটু বড় হলে প্রযোজ্য। যদি আপনার ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা কোম্পানি হয় তাহলে সত্যায়িত সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন ফটোকপি, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন লাগবে।

ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা : 

ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়িক লাইসেন্স পেয়ে গেলে ব্যংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যার মাধ্যমে যাবতীয় ব্যবসায়িক লেনদেন করা। সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো ব্যাংকেই এই অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে।

লাভ-লোকসান : ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার লাভ বেশ ভালোই। শুরুতেই যদি অনেক পরিশ্রম করা যায়। যোগাযোগ দক্ষতা এই ব্যবসার সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরিচিত বাস মালিক, হোটেল বা থাকার জায়গায় ভালো ডিস্কাউন্ট করাতে পারলে আর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে যে কেউ এ ব্যবসায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন। শুরুতে খুব অল্প মূলধন দিয়েই এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। 

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ