অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার উপায়

ভালো ছবি তোলার জন্য এখন আর আলাদাভাবে ক্যামেরা কেনার প্রয়োজন হয় না। আমাদের সবার হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন এবং এর সঙ্গে যুক্ত আছে স্মার্ট ক্যামেরা। মোবাইলের এই ক্যামেরা ব্যবহার করেই ছবি তুলে তা অনলাইনে বিক্রি করা যায় এবং এর মাধ্যমে উপার্জন করা যায় বেশ কিছু অর্থ।

আমাদের এই আর্টিকেলে “কিভাবে অনলাইনে মোবাইল বা ক্যামেরা দ্বারা তোলা ছবি বিক্রি করে ইনকাম করা যায়” অর্থাৎ, সহজ ভাষায় অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার উপায় সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথমেই বলে রাখি, প্যাশন ছাড়া এই কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ছবি তোলা যাদের শখ, শুধুমাত্র তাদের কাছেই অনলাইনে ছবি বিক্রি করে টাকা ইনকাম করা ডাল ভাত মনে হবে।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার উপায় 1

বাকিরা শুরু করার দুইদিন পরই ফটোগ্রাফার ক্যারিয়ার হতাশার সাগরে ডুবিয়ে মারবে।

কিভাবে অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করা যায় ?

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার কথা আজও অনেকে জানে না। আবার এই সেক্টরে প্রচুর ইনকাম করা মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।

সময়ের সাথে ফটোগ্ৰাফি করে আয় এর সুযোগ দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যাও।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর মূলত দুটি উপায় রয়েছে। সেগুলো হলো –

1.নিজস্ব ওয়েবসাইড

2. স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট

নিজস্ব ওয়েবসাইট

নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপনি নিজের তোলা ছবি আপলোড করে আয় করতে পারবেন। এজন্য প্রথমে আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।

ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেস যেকোনো প্লাটফর্ম বেছে নিতে পারেন। যেহেতু, অনলাইনে আয়ের উদ্দেশ্যেই ওয়েবসাইটটি তৈরি করছেন, তাই ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নিয়ে শুরু করাই ভালো।

ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য আপনি কোনো ওয়েব ডেভেলপারের সাহায্য নিতে পারেন। অথবা নিজেও করতে পারেন। তবে তার আগে অবশ্যই এ সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে নিতে হবে।

আমাদের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবে এ বিষয়ে প্রচুর টিউটোরিয়াল পাবেন।

ওয়েবসাইটটি প্রস্তুত হয়ে গেলে সেখানে নিয়মিত ছবি আপলোড করতে হবে। ছবি আপলোড করলেই আয় শুরু হয়ে যাবে না; এর জন্য ছবিগুলো বিক্রি হতে হবে।

তাই দেখতে হবে, আপনার ছবিগুলো ক্লায়েন্টের চাহিদা পূরণ করতে পারছে কিনা। আর এজন্য ছবিগুলো হতে হবে প্রোফেশনাল মানের।

স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো- বিভিন্ন স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করা।

এজন্য শুধু আপনাকে কিছু স্টক ইমেজ সাইটে গিয়ে সাইন আপ করতে হবে। সাইন আপের জন্য প্রয়োজন হবে আপনার নাম, ঠিকানা, ইমেইল এড্রেস, মোবাইল নাম্বারসহ আরো কিছু তথ্য । বেশিরভাগ সাইটে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য কোন ফি দিতে হয় না।

নিয়মিত মানসম্মত ছবি আপলোড করলে খুব দ্রুত আপনার ছবিগুলো বিক্রি হতে শুরু করবে। আর যখনি কোনো ক্লায়েন্ট এসব সাইট থেকে আপনার কোন ছবি কিনে নেবে, তার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনাকে কমিশন হিসেবে দেয়া হবে।

মনে রাখবেন, একটি ছবি শুধুমাত্র একবার নয়, বিক্রি হতে পারে কয়েক হাজার বারও! এবং প্রত্যেকবার ছবি বিক্রির জন্য আপনাকে কমিশন দেয়া হবে।

অনেক ওয়েবসাইটে আপনার ছবির মূল্য আপনি নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন। স্টক ইমেজ সাইটের আরেকটি ভালো দিক হলো, একটি ছবি আপনি একাধিক সাইটে বিক্রি করতে পারবেন। (তবে সকল স্টক ইমেজ সাইটই আপনাকে এ অনুমতি দেবে না।

নিজস্ব ওয়েবসাইট Vs স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট

নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছবি বিক্রি করে আয় এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর সময় ও শ্রম। একটি নতুন ওয়েবসাইটে ভিজিটর পাওয়া চারটি খানি কথা নয়। আর এখানে তো প্রয়োজন ক্রেতা!

অনলাইনে ছবি বিক্রির প্রচুর ওয়েবসাইট আছে। সেখানে আছে কয়েকশ মিলিয়ন প্রোফেশনাল মানের ছবি। ছবির জন্য ক্লায়েন্ট অবশ্যই সে সাইটগুলো বেছে নেবে।

অনলাইনে ফটোগ্ৰাফি ক্যারিয়ার গড়তে আপনাকে ক্লায়েন্ট ধরে আনতে হবে। শুধু তাই নয়, সেইসাথে তাদের ধরেও রাখতে হবে! এবং তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর সময়, দক্ষতা ও পরিশ্রমের।

নিজস্ব ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে আয় এর সুবিধা হলো এখানে ছবি বিক্রির সম্পূর্ণ টাকাটাই হবে আপনার। এজন্য কাউকে কোন কমিশন দিতে হবে না।

কিন্তু নিজস্ব ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে ইনকাম এর পথ আপনার জন্য মোটেও সহজ হবে না। খুব বেশি পরিশ্রমী ও ধৈর্য্যশীল না হলে এই আইডিয়া মাথায় না আনাই ভালো। শুধু ভালো নয় খুবই ভালো! আপনার সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচবে।

স্টক ইমেজ সাইটে ছবি বিক্রি করে আয় করা অনেকটাই সহজ। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট তৈরির আলাদা কোনো ঝামেলা নেই। তাই সম্পূর্ণ মনোযোগটাই আপনি দিতে পারবেন ফটোগ্ৰাফিতে। ছবিগুলো মানসম্মত হলে ফটোগ্ৰাফি করে আয় আপনার জন্য মোটেও কঠিন হবে না।

তবে, স্টক ইমেজ সাইটে বিক্রি হওয়া ছবির সম্পূর্ণ টাকাটাই আপনি পাবেন না। প্রতিবার ছবি বিক্রির জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আপনাকে কমিশন হিসেবে দেয়া হবে।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর জন্য, আমি আপনাকে স্টক ইমেজ সাইটে রেজিষ্ট্রেশনের পরামর্শই দেব। এ পথটাই সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী। এখানে আপনার ছবিগুলো বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর এবং আপনি এখান থেকে খুব দ্রুত আয় শুরু করতে পারবেন।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করতে কি কি প্রয়োজন হবে?

আপনি যদি ফটোগ্ৰাফি করে আয় এর কথা ভেবে থাকেন তাহলে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করুন।

এখানে আপনি একা নন; যে কিনা অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করতে চাচ্ছে। আপনার মতোই হাজার মিলিয়ন মানুষ আছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রোফেশনাল ফটোগ্ৰাফার। নন-প্রোফেশনাল অনেকের ছবিও প্রোফেশনাল মানের!

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর জন্য সাধারণ ৩ টি বিষয় প্রয়োজন হবে।

  1. একটি ভালো ক্যামেরা (সেটা আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরাও হতে পারে)।
  2. ফটোগ্ৰাফি ও ফটোইডিট সম্পর্কে জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা।
  3. নিজস্ব ওয়েবসাইট/স্টক ইমেজ সাইটে একটি একাউন্ট।

ক্যামেরা

অনলাইনে এত এত ছবির ভিড়ে ক্লায়েন্টরা সবসময় সেরা ছবিটিই বেছে নেবে। বুঝতেই পারছেন অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম এর প্রতিযোগিতা ঠিক কতটা কঠিন! ছবি তুলে আয় করে ফটোগ্ৰাফি ক্যারিয়ার গড়তে আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। আর এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন একটি ভালো ক্যামেরা।

হাতে থাকা স্মার্টফোনও হতে পারে ফটোগ্রাফি ক্যামেরার বিকল্প। তাই আপনার যদি ডিএসএলআর বা ডিজিটাল ক্যামেরা না থাকে তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

ফোনের ক্যামেরা যথেষ্ট ইফেক্টিভ না হলে আপনি প্লে-স্টোর থেকে কিছু সেরা এ্যপ্লিকেশন ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

শুধু ক্যামেরা এ্যপ ইনস্টল করেই আপনার কাজ শেষ নয়। সেইসঙ্গে প্রয়োজন এ্যপের ব্যবহার সম্পর্কে জানা। এজন্য এ্যপের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নেড়েচেড়ে দেখা প্রয়োজন। দেখে নেয়া প্রয়োজন কোন মুড/ইফেক্টটি কোন ধরণের ছবির জন্য পারফেক্ট।

জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা

ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রতিনিয়ত নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো।

ফটোগ্ৰাফি সম্পর্কে শুধু প্রাথমিক ধারণা নয়, প্রয়োজন বিস্তারিত জ্ঞান। ছবির লাইট, কালার, এ্যাঙ্কেল, রেজুলেশন, ফোকাস, ফ্রেমিং, ব্যাকগ্রাউন্ড, ভিউ পয়েন্ট কি, কেন, কিভাবে সবকিছুই জানতে হবে বিশদভাবে।

এজন্য নিয়মিত ফটোগ্ৰাফি বিষয়ক প্রতিবেদন/বই পড়তে পারেন। গুগলে আপনি এ বিষয়ে অনেক আর্টিকেল পেয়ে যাবেন। ফটোগ্ৰাফি বিষয়ক প্রাথমিক ধারণার জন্য এই আর্টিকেল দুটি পড়ে দেখতে পারেন।

  • হয়ে উঠো একজন প্রো মোবাইল ফটোগ্রাফার!
  • ফটোগ্রাফিতে কিছু নিয়ম

ছবি তুলে আয় এর জন্য আপনার অভিজ্ঞতা থাকাটাও জরুরী। ফটোগ্ৰাফিতে আপনার জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যত বাড়বে ততই আপনি এ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবেন। তাই চেষ্টা করুন নিজের স্কিল ডেভেলপ করার। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি এ বিষয়ে অনলাইন/অফলাইনে মোটামুটি ধরণের একটি কোর্স করে নেন।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর জন্য আপনার ফটোইডিটের দক্ষতা থাকাও জরুরী। তাই ফটো ইডিট সম্পর্কে যতটা সম্ভব গভীরে গিয়ে জানার চেষ্টা করুন। এডোবি ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটরের উপর দক্ষতা থাকলে এক্ষেত্রে আপনি অনেক এগিয়ে থাকবেন।

নিজস্ব ওয়েবসাইট / স্টক ইমেজ সাইটে একটি একাউন্ট

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর জন্য তৃতীয়ত আপনার প্রয়োজন হবে- বিক্রির জায়গা। এজন্য আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। অথবা স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে সাইন আপ করে একজন কন্ট্রিবিউটর হতে হবে।

অনলাইনে স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটের সংখ্যা প্রচুর। এসব সাইটে ছবি আপলোডের নিয়ম এবং কমিশনের পরিমাণও আলাদা। তাই সাইন আপের আগে স্টক ইমেজ সাইটটির Terms and Conditions এবং Service খুব ভালো করে পড়ে নিতে হবে।

অন্যান্য

যেহেতু আপনি অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করতে চাচ্ছেন; তাই আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। কারণ ছবি আপলোড করে আয় এর সম্পূর্ণ পদ্ধতিটিই ইন্টারনেট নির্ভর।

সর্বোপরি আপনার মধ্যে প্রচুর ধৈর্য্য ও প্রচেষ্টা থাকতে হবে। একটুতেই হাল ছেড়ে দেয়ার মনোভাব থাকলে; ফটোগ্ৰাফি করে আয় আপনার দ্বারা সম্ভব নয়!

ছবিগুলো কারা কেনেন? কেন কেনেন?

বিভিন্ন ওয়েবসাইট, কর্পোরেশন সংস্থা, গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ডিজাইনার, মার্কেটার, ই-কমার্স সাইটে অনলাইন জগৎ আজ জমজমাট। বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে শুরু করে ব্লগার সবারই কোন না কোন কাজে ছবি প্রয়োজন।

গাছপালা, ফুল-ফল, পাহাড়-নদী, জীবনযাত্রা, খাবার-দাবার, উৎসব, যানজট, আন্দোলন, পোশাকসহ এখন প্রায় সকল ধরণের ছবিরই চাহিদা প্রচুর।

গণমাধ্যম, ব্লগ বা ই-কমার্স সাইটে প্রয়োজনীয় ছবির জন্য আলাদা করে ফটোশুট করা অনেক বেশি ঝামেলার ও ব্যয়বহুল। তাই তাদের বিভিন্ন স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট থেকে ছবি কিনতে হয়।

সাধারণ সার্চেই অনেক ছবি পাওয়া যায় সত্যি। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারে কপিরাইট ক্লেইম আসার ভয় থাকে। কারণ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই কপিরাইট আইন আছে। এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলো (Google, Yahoo, Bing) এই আইনের ব্যাপারে অনেক বেশি কঠোর।

অনলাইনে এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে রয়্যালিটি ফ্রি ছবি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। Pixels.com, Pixabay, Unplash এমনি কিছু ওয়েবসাইট। আমাদের দেশে এসব ছবি ব্যবহারের প্রচলন বেশি। তবে অন্যান্য দেশে রয়্যালিটি ফ্রি ছবির জন্য মানুষ স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটের উপর নির্ভর করে।

স্টক ইমেজ সাইটে ছবির কোয়ালিটি এবং ছবি ব্যবহারের স্বাধীনতা এই নির্ভরশীলতার মূল কারণ। এবং ভবিষ্যতে আমাদের দেশের ব্লগার-মার্কেটাররাও এসব ছবির উপর নির্ভর করবে।

এভাবে আপনি যেমন অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করতে পারবেন তেমনি ছবির জন্য তাদের আলাদা করে ফটোশুট করতে হবে না।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় কতটা লাভজনক?

অনলাইনে ছবি বিক্রি করা আপনার জন্য কতটা লাভজনক; তা নির্ভর করবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর।

ছবির কোয়ালিটি

আপনার ছবিগুলো কি যথেষ্ট কোয়ালিটিফুল? সাধারণ মানের ছবি কখনোই ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে না। ফটোগ্ৰাফি করে আয় করতে হলে আপনাকে কোয়ালিটি সম্পন্ন ছবি তুলতে হবে। ছবির রেজুলেশন, আলোর প্রভাব, কোণ সবকিছু খেয়াল রাখতে হবে।

ইডিটও করতে হবে নিখুঁত ভাবে। মোটকথা আপলোডের জন্য আপনাকে খুব খেঁটেখুঁটে এবং সময় নিয়ে একটি ছবি তৈরি করতে হবে। স্টক ইমেজ সাইটে কোয়ালিটিফুল ছবির সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন। এত ছবির মধ্যে ক্লায়েন্ট সে ছবিটিই বেছে নেবে যেটায় বিশেষত্ব থাকবে।

সেইসাথে ছবি বিক্রি করে আয় এর জন্য ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী ছবি তোলাটাও জরুরী। বিভিন্ন স্টক ইমেজ সাইটের ছবিগুলো নিয়ে রিসার্চ করলে; আপনি ক্লায়েন্টদের চাহিদা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।

ছবি আপলোডের সংখ্যা

কোয়ালিটির পর অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর পরিমাণ নির্ভর করবে- ছবির সংখ্যার উপর। সাইটে আপলোড করা ছবির সংখ্যা যত বেশি হবে তা বিক্রির সম্ভবনাও তত বাড়বে। এবং সেইসাথে আপনার আয় এর সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।

তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ টি ছবি আপলোড করুন। তাহলে মাসে তার সংখ্যা দাড়াবে ৭×৩০=২১০ বা ৮×৩০=২৪০! এবং ৬ মাসে ছবির মোট পরিমাণ হবে ২১০×৬=১২৬০ বা ২৪০×৬=১৪৪০!

প্রতি ছবি বিক্রিতে কমিশন

প্রতিবার ছবি বিক্রিতে কমিশনের উপরও আপনার আয় নির্ভর করবে। স্টক ইমেজ সাইটভেদে সাধারণ ২৫%-৮৫% পর্যন্ত কমিশন দেয়া হয়।

প্রতিবার ছবি বিক্রিতে ০.২৫ ডলার দেয়া হলে ৫০ টি ছবি বিক্রিতে আপনার আয় হবে ০.২৫×৫০=১২.৫ ডলার বা ১২.৫×৮৪.৭৫=১০৫৯.৩৭৫ টাকা।

আবার প্রতি ছবি বিক্রিতে ৫ ডলার করে দেয়া হলে ৫০ ছবির জন্য আপনার আয় হবে ২১,১৮৭.৫ টাকা।

ছবি বিক্রির ধরণ

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর পরিমাণ নির্ভর করে প্রতি ছবি বিক্রিতে প্রাপ্ত কমিশনের উপর এবং এই কমিশন অনেকটাই নির্ভর করবে- ছবি বিক্রির ধরণের উপর। স্টক ইমেজ সাইটগুলোতে আপনার ছবিগুলো দুটি লাইসেন্সে বিক্রি হতে পারে, Exclusively এবং Non-exclusively.

প্রতিবার ছবি আপলোডের আগে এক্সুসিভ বা নন-এক্সুসিভ সিলেক্ট করে দিতে হয়।

Exclusive License: এই লাইসেন্স অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ছবি আপনি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটেই বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে একাধিক ওয়েবসাইটে একই ছবি আপলোড করে আয় এর সুযোগ আপনি পাচ্ছেন না।

Exclusive License এ প্রতি ছবি বিক্রিতে তুলনামূলক বেশি কমিশন দেয়া হয়। তবে শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইটে ছবি আপলোড করা হয় বলে তা বিক্রির সম্ভাবনা খুবই কম। তাই এক্ষেত্রে ফটোগ্ৰাফি করে আয় এর পরিমাণও কম হবে।

Non-exclusive License: এ লাইসেন্স অনুযায়ী আপনি একটি নির্দিষ্ট ছবি একাধিক সাইটে আপলোডের সুযোগ পাবেন।Non-exclusively প্রতি ছবি বিক্রিতে আপনাকে তুলনামূলক কম কমিশন দেয়া হবে। তাই অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় এর পরিমাণও হবে কম।

তবে একাধিক ওয়েবসাইটে ছবি আপলোড করায় তা বিক্রির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর ছবি বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া মানে আয়ের পরিমাণও বেড়ে যাওয়া

পেমেন্ট কিভাবে হাতে পৌঁছাবে?

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করা টাকা কিভাবে তুলবেন; তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। স্টক ইমেজ সাইটে আপলোড করা ছবি বিক্রি হলে তা থেকে আপনাকে কমিশন দেয়া হবে। সে কমিশন জমা হবে আপনার স্টক ইমেজ সাইট একাউন্টে।

একাউন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হলেই আপনি সেটা তুলতে পারবেন। স্টক ইমেজ সাইটগুলো আমাদের দেশের নয়। তাই টাকা তুলতে আপনাকে কিছুটা জটিল পদ্ধতির ভেতর দিয়েই যেতে হবে।

লোকাল ব্যাংক

আজকাল প্রায় সবারই লোকাল ব্যাংক একাউন্ট আছে। এই একাউন্টের মাধ্যমেই আপনি আয় করা টাকা হাতে পেয়ে যাবেন। সেটা DBBL, EBL, ইসলামিক ব্যাংক, অগ্ৰণী ব্যাংকসহ যেকোন লোকাল ব্যাংক হতে পারে।

প্রায় সকল স্টক ইমেজ সাইটেই “WIRE Transfer” এর মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের সুবিধা দেয়া হয়। অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করা টাকা তোলার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে: একটি ব্যাংক একাউন্ট, একাউন্ট নাম্বার, সে ব্রাঞ্চের SWIFT code এবং ব্যাংকের ঠিকানা।

একাউন্টের নাম অবশ্যই স্টক ইমেজ সাইট একাউন্টের নামে হতে হবে। এবং ব্যাংক ও স্টক ইমেজ সাইট একাউন্টে কোন ভুল তথ্য দেয়া যাবে না। ছবি বিক্রি করে আয় করা টাকা আপনার লোকাল ব্যাংক একাউন্টে আসতে ১-৬ দিন লেগে যাবে।

Payoneer MasterCard

Payoneer MasterCard ব্যবহার করে এটিএম বুথের মাধ্যমে, দেশের যেকোন জায়গা থেকে যেকোন সময় টাকা তোলা যায়। এ কার্ডের সঙ্গে আপনাকে একটি আমেরিকান ব্যাংক একাউন্ট ও ইউরোপিয়ান ব্যাংক একাউন্ট দেয়া হবে।

যে সকল স্টক ইমেজ সাইটে লোকাল ব্যাংক ট্রান্সফারের সুবিধা নেই সেখানে আপনি US Bank Transfer এর মাধ্যমে পেমেন্ট পেয়ে যাবেন। জনপ্রিয় প্রায় সকল স্টক ইমেজ সাইটেই US Bank Transfer এর সুযোগ দেয়া হয়।

MasterCard পেতে payoneer.com এ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কার্ডটি হাতে পাবার আগ পর্যন্ত আপনাকে কোন টাকাই খরচ করতে হবে না। কার্ডে টাকা ট্রান্সফারের পর কার্ডের মূল্য হিসেবে $২৯ কেটে নেয়া হবে। এবং রেজিস্ট্রেশনের পর পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে $২৫। অর্থাৎ আপনার খরচ হবে মাত্র $৪।

রেজিস্ট্রেশনের সময় অবশ্যই সঠিক তথ্য দিতে হবে। আপনি এখনও আয় শুরু করেননি তাতে সমস্যা নেই। কার্ডের জন্য এ্যপ্লাইয়ের সময় প্রমাণ চাইলে আপনার যেকোন স্টক ইমেজ সাইটের প্রোফাইল লিংক দিয়ে দিলেই হবে। তাতে তারা নিশ্চিত হবে যে কার্ডটি আপনার সত্যিই প্রয়োজন।

PayPal ফ্রিল্যান্সারদের খুবই কাছের বন্ধু। কিন্তু বাংলাদেশে PayPal সুবিধা নেই। তাই বিকল্প হিসেবে আপনার বন্ধু হতে পারে Skrill. এটি একটি অনলাইন ব্যাংক। এর মাধ্যমে আপনি অনলাইন স্টোরে domain, hosting বা বিভিন্ন premium package কেনাকাটা করতে পারবেন।

জনপ্রিয় সকল স্টক ইমেজ সাইটেই Skrill একাউন্টের মাধ্যমে টাকা তোলার সুযোগ আছে। Skrill এ রেজিস্ট্রেশনের জন্য- www.skrill.com (ক্লিক করুন).

রেজিস্ট্রেশনের সময় অবশ্যই সঠিক তথ্য দিতে হবে। কোন তথ্য ভুল হলে পরে বিপদে পড়তে পারেন। আপনার Skrill একাউন্ট থেকে লোকাল ব্যাংকে টাকা পৌঁছাতে ৩-৭ দিন প্রয়োজন হবে।

আর্টিকেলটি ওয়িথবাংলা থেকে নেওয়া হয়েছে

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ