সার্চ ইঞ্জিন কি?

সার্চ ইঞ্জিন বলতে একটি নিদির্ষ্ট প্রোগ্রামকে search-engine-optimizationবুঝায় যা নিদির্ষ্ট শব্দ বা কিওয়ার্ডের ভিত্তিতে তার সংরক্ষিত বিভিন্ন নথি বা ডকুমেন্টের একটি শ্রেণী বদ্ধ তালিকা তৈরী করে ব্যবহারকারীদের প্রদর্শন করে। বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিন বলতে বুঝানো হয় গুগল , ইয়াহু, বিং যা ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্য খুজে পেতে সহায়তা করে।

উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে

A web search engine is a software system that is designed to search for information on the World Wide Web.

সার্চ ইঞ্জিনের ধারণা

প্রশ্ন আসতেই পারে,সার্চ ইঞ্জিনের ধারণাটি কার মাথা থেকে উৎপত্তি? মিনিনসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্ক ম্যাকাহিল নামের একজন ছাত্র গফার নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরী করেন যা টেক্সট ফাইল সমুহ একটি নিদির্ষ্ট ক্রমানুসারে সাজিয়ে রাখবে যা বর্তমানে ইনডেক্স করার সাথে তুলানা করা যেতে পারে এবং পরর্বতীতে খোজ করলে সেখান থেকে তা দেখাবে । ইন্টারনেটে প্রথম সকলের জন্য উন্মুক্ত ওয়েবসাইট তার ই বানানো।

আধুনিক সার্চ ইঞ্জিনের ইতিহাস

Search Engine বর্তমানে অনেকাংশে পুর্ণতা লাভ করেছে। বর্তমানে আমরা সার্চ ইঞ্জিন বলতে যা বুঝি তার উৎপত্তি হয় ১৯৯৩ সালে।seo-past ম্যাথু গ্রে ছিলের প্রখম সার্চ ইঞ্জিনের নির্মাতা । এর নাম ছিল ওয়ানডেক্স । ওয়ানডেক্স ই হচ্ছে প্রথম প্রোগ্রাম যা ইনডেক্স পদ্ধতি চালু করে । এবং ওয়েবে ইনডেক্সকৃত পেজগুলোকে ফলাফলে প্রদর্শন করত । এই পদ্ধতিই সকল সার্চ ইঞ্জিনের মুল ভিত্তি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সম্ভবত সবগুলো প্রধান সার্চ ইঞ্জিনের উদ্ভব ।

  • এক্সাইট (Excite) – ১৯৯৩ সাল
  • ইয়াহু (Yahoo)-১৯৯৪ সাল
  • ওয়েব ক্রলার (Web Crawler) – ১৯৯৪ সাল
  • লাইসোস (Lycos) – ১৯৯৪ সাল
  • ইনফোসিক (info seek) – ১৯৯৫ সাল
  • অ্যাল্টা ভিসদা (Alta Vista)- ১৯৯৫ সাল
  • ইঙ্কটোমি (inkTomy) – ১৯৯৬ সাল
  • আস্ক জেভিস (Ask)- ১৯৯৭ সাল
  • গুগল (Google) – ১১৯৭ সাল
  • এমএসএন সার্চ – ১৯৯৮ সাল

এছাড়া বর্তমানে অনেক সার্চ ইঞ্জিন আছে। যেমন DuckDuckgo, Dogpile ইত্যাদি ।

সার্চ ইঞ্জিনের প্রকারভেদ

সার্চ ইঞ্জিন সমুহকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়।

  • প্রাইমারী
  • সেকেন্ডারি
  • টার্গেটেড

সার্চ ইঞ্জিনের এই সকল শ্রেণীবিভাগের মুলে রয়েছে তাদের এলগরিদম বা তাদের কার্যপদ্ধতি।

প্রাইমারি সার্চ ইঞ্জিন

সার্চ ইঞ্জিনের কথা বললে প্রথম যেসকল সার্চ ইঞ্জিনের নাম আপনার মুখে আসে সেগুলোই হচ্ছে প্রাইমারী সার্চ ইঞ্জিন । যেমন গুগল , ইয়াহু,বিং ইত্যাদি। প্রাইমারী সার্চ ইঞ্জিন থেকেই অধিকাংশ ট্রাফিক আপনার সাইটে প্রবেশ করবে । তাই এসইও এর জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব এই সকল সার্চ ইঞ্জিনগুলোকেই দিতে হবে । প্রত্যেকটি সার্চ ইঞ্জিন একটি আর একটি থেকে আলাদা। যেমন লাইসোস গুগলের অনেক আগেই তৈরী। কিন্তু গুগল সার্চ ইঞ্জিন জগতে সর্বাধিক জনপ্রিয়। প্রশ্ন আসতে পারে কেন ? কারণ গুগল সর্বাধিক নিখুত প্রদর্শন করে।

অধিকাংশ প্রাইমারি সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ফলাফলের ছাড়াও অন্যান্য অনেক সেবা প্রদান করে। যেমন যেমন ইমেইল সেবা, মানচিত্র, সংবাদ ও বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সেবা । এই সেবাগুলো ব্যবহারকারীর সার্চ করার ধরন পাল্টিয়ে দেয় নি কিন্তু ব্যবহারকারীকে নিদির্ষ্ট সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে।

গুগল
সার্চ ইঞ্জিনের রাজা বলা যায়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়ার কারণ হচ্ছে সর্বাধিক ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন। আর ব্যবহারকারীর কাছে গুগলের গুরুত্ব পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নিখুত ফলাফল। গুগল বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে যেমন ইমেইল , পার্সোনালাইজড হোম পেজ কিন্তু গুগলের জনপ্রিয়তার মুল কারণই হচ্ছে এর সার্চ ফলাফলের বিশ্বস্ততা।

নিজস্ব এলগরিদমের মাধ্যমে গুগল সর্বাধিক নিখুত ফলাফল প্রদর্শন করে। কোন ওয়েবসাইটকে র‌্যাংকিং এ এগিয়ে রাখবে তার জন্য প্রায় গুগলের ২০০ এর অধিক র‌্যাংকিং ফ্যাক্টর রয়েছে।

ইয়াহু
সার্চ ইঞ্জিনের পাশাপাশি ইয়াহু ওয়েব ডিরেক্টরি। ওয়েব ডিরেক্টরি বলতে সাধারণভাবে বল যায়, বিভিন্ন ওয়েবপেজের লিষ্ট তৈরী করে তাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরী ও সাব- ক্যাটাগরীতে বিভিক্ত করে । ইয়াহুর যাত্রা শুরু হয়েছিল ওয়েব ডিরেক্টরি হিসাবেই । সময়ের সাথে All the Web, Altavista, Overture ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে ।

জেনে অবাক হবেন , গুগল একসময় ইয়াহুর ডিরেক্টরি ব্যবহার করতো লিংক প্রদর্শনের জন্য। বর্তমানে বিভিন্ন এলগরিদম তৈরীর মাধ্যমে গুগল ইয়াহু এর চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

এমএসএন বা বিং

ইয়াহু বা গুগলের মত পুর্ণতা লাভ করে নি এই সার্চ ইঞ্জিনটি । মুলত কিওয়ার্ডের ঘনমাত্রা ও আরও কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে সার্চের ফলাফল প্রদর্শন করে। বিভিন্ন ব্যবহারকারীর পছন্দ বলে এটি প্রাইমারী সার্চ ইঞ্জিনের মত গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সেকেন্ডারী সার্চ ইঞ্জিন

সেকেন্ডারী সার্চ ইঞ্জিন মুলত ছোট ও নিদির্ষ্ট উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন লাইসোস (lycos), আস্ক (Ask) (বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তরের জন্য আস্ক), লুকস্মার্ট (LookSmart) ইত্যাদি ।
অধিকাংশ সেকেন্ডারী সার্চ ইঞ্জিন কিওয়ার্ড , রেসিপ্রোকাল লিংক ও মেটা ট্যাগ সমুহ এর উপর ভিত্তি করে সার্চ ফলাফল প্রদর্শন করে।

সেকেন্ডারী ইঞ্জিন সমুহ এসইও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে যদিও এই সার্চ ইঞ্জিনসমুহ প্রাইমারী সার্চ ইঞ্জিনের মত এত বেশী ট্রাফিক নিয়ে আসবে না ।

যেমন Aol যদিও অধিকাংশ AOl ব্যবহারকারীদের হারিয়েছে। কিন্তু নিদির্ষ্ট কিছু সংখ্যাক ব্যবহারকারী বিশেষত ব্রড ব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকেই Aol ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন ।

টার্গেটেড সার্চ ইঞ্জিন

একেবারে নিদির্ষ্ট কিছু সার্চের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন Yahoo! Travel,মিউসিক সার্চ, আবার ইউটিউব ও বলতে পারেন । শুধু ভিডিও সার্চের জন্য ইউটিউব ।

এই সব সাইট থেকে ট্রাফিক খুব কম আসলেও এই গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। কারণ এই সব সাইট থেকে টার্গেটেড ট্রাফিক আপনার সাইটে আসবে ।

আবার কার্যপদ্ধতির উপর নির্ভর করে সার্চ ইঞ্জিনকে ৫ টি ভাগে ভাগ করা যায়।

  1. ক্রলার নির্ভর
  2. ডাইরেক্টরিস
  3. হাইব্রিড
  4. ম্যাটা
  5. বিশেষায়িত সার্চ ইঞ্জিন

ক্রলার নির্ভর
স্পাইডারস, ক্রলারস, রোবটস অথবা বোট ইত্যাদি হচ্ছে বিশেষ ধরনের এপ্লিকেশন। এই এপ্লিকেশনগুলো প্রতিনিয়ত এক ওয়েবপেজ থেকে অন্য ওয়েবপেজে ঘুরে বেড়ায় এবং ডাটা বা তথ্য সংগ্রহ করে নিদির্ষ্ট শ্রেনীতে সাজিয়ে রাখে। ব্যবহারকারীর কিওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে সার্চ ফলাফল প্রদর্শন করে। গুগল, আস্ক ইত্যাদি হচ্ছে ক্রলার নির্ভর সার্চ ইঞ্জিন।

ডাইরেক্টরিস
ডারেক্টরি নির্ভর সার্চ ইঞ্জিনগুলো মুলত বিভিন্ন সাইটের প্রাপ্ত তথ্যকে নিদির্ষ্ট ক্রমানুসারে সজ্জিত রাখে। বুঝার সুবিধার জন্য অনেক ক্ষেত্রে ফোন ডিরেক্টরির সাথে তুলানা করা যেতে পারে। ইয়াহু, ওপেন ডিরেক্টরি (dmoz.org)

হাইব্রিড
যখন ক্রলার নির্ভর সার্চ ইঞ্জিন এবং ডাইরেক্টরিস সার্চ ইঞ্জিন এক সাথে কাজ করে সেটা হচ্ছে হাইব্রিড সার্চ ইঞ্জিন ।উদাহরণ হিসাবে : ইয়াহু, গুগল

ম্যাটা সার্চ ইঞ্জিন
ম্যাটা সার্চ ইঞ্জিনগুলো অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে ফলাফল নিয়ে থাকে এবং সকল ফলাফলকে একত্রিত করে ফলাফল দেখায়। ম্যাটা সার্চ ইঞ্জিনের উদাহরন , যেমন –মেটা ক্রলার, ডগপাইল।

স্পেশাল বা বিশেষায়িত সার্চ ইঞ্জিন
স্পেশাল সার্চ ইঞ্জিনের প্রধান কাজ নিশ রিলেটেড সার্চের কাঠামো উন্নত করা।
এর সংখ্যা কম নয় বরং অসংখ্য , যেমন –

যেমন
কেনাকাটার জন্য
– ফ্রগেল (www.froogle.com)
– ইয়াহু শপিং (www.shopping.yahoo.com)
– বিজরেট (www.bizrate.com)
– প্রাইস গ্রেবার (www.pricegrabber.com)
– প্রাইসস্পাই (www.pricespy.co.nz)

লোকাল সার্চ
– এনজেডপেজ (www.nzpages.co.nz)
– পিপিলিকা

ডোমেইন নেম খোজার জন্য
– আইসার্ভ (www.iserve.co.nz)
– ফ্রি পার্কিং (www.freeparking.co.nz)

ফ্রিওয়্যার ও সফটওয়্যারের জন্য
– টুকাউস (www.tucows.com)
– সিনেট ডাউনলোড(www.download.com)

সর্বশেষ কিছু কথা : সার্চ ইঞ্জিনের শ্রেণীবিভাগ আরও অনেকভঅবে করা যায় ।প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সার্চ ইঞ্জিন তৈরী হচ্ছে। প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা কারণে বিখ্যাত। তাই এসইও জন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক।

By Muhammad Rakibul Islam

Founder and CEO of EshoAyKori.com Founder and CEO of Jibonpata.com https://www.jibonpata.com/rakib

1 thought on “সার্চ ইঞ্জিন কি?”

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ