Social Marketing

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি?

আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর টানার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি বড় উৎস। মার্কেটিংয়ের মাধ্যম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো থেকে ভিজিটর নিজের সাইটে ভিজিটির ড্রাইভ করা যায়। কনটেন্ট শেয়ারিং এর মাধ্যমে ভিজিটরকে আকৃষ্ট করতে হয়। উপরন্তু ভিজিটরকে আপনার কনটেন্টে সন্তুষ্ট করে শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আরও বেশি অডিয়েন্সের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। যা আপনার সাইট বা প্রোডাক্টের পপুলারিটি বা সেল বাড়ানোর জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কেন প্রয়োজন ?
ছোট্ট একটি লাইনই যথেষ্ট। যদি প্রচুর ইউনিক ভিজিটর এবং সেল বাড়াতে হয় তবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের বিকল্প বর্তমানে নাই। কারন প্রায় কয়েক বিলিয়ন মানুষ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বিচরণ করছে। তাই প্রোডাক্ট মার্কেটিং বা ব্র্যান্ড তৈরি করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং গুরুত্ব অপরিহার্য।

যে কারনে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করবেন:
১. ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য
২. ব্র্যান্ড হিসেবে দাড় করানোর জন্য
৩. কম খরচে অনেক বেশি প্রোফিট পাওয়ার জন্য
৪. মার্কেটিং খরচ কমিয়ে আরও বেশি অডিয়েন্সে পৌঁছানর জন্য
৫. সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাঙ্কে নিজের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার জন্য
৬. কাস্টমার ইনসাইট বাড়ানোর জন্য
৭. কাস্টমারের সাথে আরও ভালো সুসম্পর্ক তৈরি করার লক্ষ্যে
৮. ট্র্যাকিং এবং মনিটর করার জন্য
৯. নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য
১০. মোবাইল মার্কেটিং করার জন্য

কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কাজটা কি এতই সহজ?

কিভাবে সঠিক পদ্ধতিতে এগুতে হয়, এইসব বিষয় জানতে বা শিখতে হয়। ঠিক এই স্থানটিকে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। যার দরুণ এই প্ল্যাটফর্মে অনেকেই সুবিধা করতে পারছে না।


একজন ক্ষুদ্র ব্যাবসায় উদ্যোক্তা, অনলাইন মার্কেটার ও ব্লগার যাদের কাজ অনলাইন নির্ভর, তাদেরকে অনলাইনের মাধ্যমে নিজের এবং পণ্যের সেবার প্রচারণা করার প্রয়োজন হয়। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটিভ না থাকেন, তাহলে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যেভাবে অনলাইন মার্কেটিং করা প্রয়োজন আপনি সেটি করছেন না।

আগের দিনের টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার বদলে এখন নিজের কাজ ও পণ্যের প্রচারণা সোশ্যাল মিডিয়া যেমন- টুইটার, ফেইসবুক, গুগল প্লাস, লিংকডইন, পিন্টারেস্টে স্থান করে নিয়েছে। এই সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলো থেকে আপনি পণ্যের প্রচারের পাশাপাশি কি করতে হবে তার সঠিক ধারণা পাবেন।

গত কয়েক বছরে অগনিত সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এসেছে। তবে কাজের প্রয়োজনে এগুলো এক একটি একেক রকম। তারপরও অনলাইন মার্কেটার ও ব্লগারদের জন্য এসব সাইট গুলো খুবই কার্যকরী। আপনি যখন আপনার টুইটার, ফেইসবুক, গুগল প্লাস, লিংকডইন, পিন্টারেস্টে লগ-ইন করবেন, তখন একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আপনার সামনে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনমূলক পোস্ট, মেসেজ ইত্যাদি দেখতে পাবেন।

এগুলোর কোনটা আপনার কাজে লাগতে পারে আবার কোনটার মোটেই মূল্য নেই আপনার কাছে। একারণে অনলাইন মার্কেটারদের মনে রাখতে হবে, আপনার পণ্য ও সেবার প্রচার ও প্রসার বাড়াতে সম্ভাব্য ক্রেতা বা সেবা গ্রহীতাদের কাছে আপনাকে পৌছাতে হবে। আর সম্ভাব্য ক্রেতা ও সেবা গ্রহীতাদের কাছে পৌছানোর জন্য আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে।

যেমন-

১। আপনার কোম্পানি ও ব্যবসায়ের জন্য একটি ইউনিক ও সহজে মনে রাখা যায় এমন নাম রাখতে হবে। নিচে উল্লেখ করা বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে আপনার পেইজ, কমিউনিটি কিংবা গ্রুপের জন্য বিশেষ টুলস রয়েছে। এগুলোর সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।
২। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কে শুধু লোক না বাড়িয়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের টার্গেট করুন।
৩। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনে অবশ্যই সুন্দর ছবি ও আকর্ষনীয় কনটেন্ট দিতে হবে।
৪। আপনার নেটওয়ার্কের উন্নয়নে এতে সম্পৃক্তদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন ও সেই অনুযায়ী এগিয়ে যান।

মার্কেটিংয়ের সেরা ৫টি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট।

ফেইসবুকঃ

ফেইসবুকে বিশ্বের এক নাম্বার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট একথা নতুন করে বলার দরকার নেই। গত জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী ফেইসবুকের বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩১ কোটিরও বেশি। আর এই বছরেই এটি ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই বিশাল জনগোষ্ঠির মাঝেই রয়েছে আপনার পণ্য বা সেবার গ্রহীতা কিংবা আপনার ওয়েবসাইট এর সম্ভাব্য ভিজিটর। ফেইসবুকে কেন এবং কিভাবে আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারণা করবেন সেটি দেখা যাক।

১। এখানে আপনি আপনার ব্যবসার প্রচারণার জন্য একটি ইউনিক ফেইসবুক পেইজ খুঁলতে পারবেন। আর এই পেইজটির নামটি যেনো আপনার ব্যবসায় সম্পর্কিত বা প্রতিষ্ঠানের নামেই হয় সে বিষয়টি খেয়াল করতে হবে।
২। একটি ফেইসবুক পেইজ আপনার ব্যবসায়ের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল ধারণ করে। এতে যুক্ত থাকা সবাই আপনার ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে। আপনার পেইজটিকে এমন ভাবে সাজানো উচিত, যাতে সম্ভাব্য ক্রেতারা আগ্রহী হয়।
৩। থাম্বনেইল হিসেবে আপনার ব্যবসায়ের লোগো ব্যবহার করুন। এটি আপনার ব্যবসায়ের প্রাথমিক পরিচয় বহন করে। এছাড়া কাভার ফটোতে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এটি অডিয়েন্সের মধ্যে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
৪। যখন আপনি কেনো পেইজ খুঁলবেন তখন এটিতে আপনার কোম্পানির তথ্য ও যোগাযোগের উপায়গুলো দিয়ে দিবেন। ফলে ক্রেতা বা সেবা গ্রহীতারা সহজেই যোগাযোগ করতে পারবে।
৫। আপনার পেইজে একাধিক অ্যাডমিন যুক্ত করুন। যাতে আপনি ব্যস্ত থাকলে অন্য অ্যাডমিনরা কনটেন্ট ও পোস্ট দিতে পারবে।

গুগল প্লাসঃ

প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের সামাজিক যোগাযোগ সেবার নাম গুগল প্লাস। গুগল প্লাসে ১০০ কোটির বেশি নিবন্ধিত ও নিয়মিত ৫৪ কোটির অধিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গুগল অথরশিপ হওয়ার এটি অনলাইন মার্কেটিংয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে। এই সাইটে কোনো কিছু শেয়ার করলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এর দিক থেকে অনেক সুবিধা দেয়। গুগল প্লাস থেকে আপনি কি সুবিধা পাবেন তা দেখে নেওয়া যাক।

১। এটি ব্যবহারকারীদের ব্র্যান্ড পেইজ তৈরির সুযোগ দেয়।
২। পেইজে কাস্টোমাইজড কাভার টেমপ্লেট এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করতে পারবেন খুব সহজেই।
৩। কনট্যাক্ট, ওয়েবসাইট ও জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশনসহ আপনার ব্যবসায়ের বিস্তারিত তথ্য এখানে যুক্ত করতে পারবেন।
৪। বিশেষ কীওয়ার্ড ও লোকেশন অনুযায়ী ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়ার সুযোগ দেয়।
৫। আপনার সার্কেলে থাকা মানুষ গুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাজাতে পারেন। এবং পরবর্তীতে এই নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মানুষ গুলোকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন প্রকার কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন।
৬। আপনার ব্র্যান্ডের জন্য একটি গুগল প্লাস পেইজ ইউনিক url পেতে পারেন।
৭। পেইজে বিভিন্ন ওয়েবমাস্টার ও এপিআই কনসোল সেবা পাবে, যা আপনার ব্র্যান্ড বা সেবাকে অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ দিবে।

টুইটারঃ

মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে বর্তমানে প্রায় ২৫ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটি টুইট হয় এই সামাজিক যোগাযোগ সাইটটিতে। বিশ্বের সেলিব্রেটি, বিশেষ ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, প্রতিষ্ঠান এই সাইটটি সক্রিয় থাকেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক আপনার কি কাজে লাগতে পারে সাইটটি।

১। টুইটারে আপনি একটি ইউনিক ইউআরএল পাবেন।
২। এতে আপনার ব্যবসায়ের প্রোফাইল ছবি, হেডার ছবি, ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি দিতে পারবেন আপনার পছন্দমত।
৩। টুইটারে আপনার ব্যবসায়ের ওয়েবসাইটটি যুক্ত করতে পারবেন। এজন্য ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই আপনার ওয়েব সাইট ভিজিট করার সুযোগ পাবে।
৪। আপনার ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটে টুইটার এপিআই উইজেট ব্যবহার করতে পারবেন।
৫। হ্যাশট্যাগ, অ্যাট (@) ইত্যাদি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার কাঙ্খিত ব্যাক্তি বা কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ সমন্বয় করতে পারেন।

লিংকডইনঃ

প্রায় ২৬ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে লিংকডইন সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট। এখানে আপনার প্রফেশনাল প্রোফাইল ও কমিউনিটি তৈরির সুযোগ রয়েছে। লিংকডইনও আপনার পণ্য বা সেবার জন্য একটি ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি করার সুবিধা দেয়। এই সাইট থেকে আপনি কি পাবেন সেটি দেখে নেওয়া যাক।

১। এখানে আপনার ব্র্যান্ডের জন্য গ্রুপ তৈরি এবং সংযুক্তদের সাথে এটা প্রোমোট করতে পারবেন।
২। তৈরি করা ব্র্যান্ড গ্রুপকে নিজের মতো সাজাতে পারবেন।
৩। আপনার গ্রুপে যেসকল ব্যবহারকারী আছে তাদের মাধ্যমেই আপনি নতুন কানেকশনের সাজেশন পাবেন। যার মাধ্যমে আপনার নেটওয়ার্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।
৪। আপনার ব্যবসায়ের ধরণ অনুযায়ী সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট খুঁজতে পারবেন।

পিন্টারেস্টঃ

এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া সোশ্যাল বুকমার্কিং সেবার সাইট। বর্তমানে প্রায় ৮ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে সাইটটিতে। ছবি ভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি আপনার পণ্য ও সেবার অনলাইন মার্কেটিংয়ে সবচেয়ে কাজে দিবে। এখানে আপনি যা যা সুবিধা পাবেন:

১। এই নেটওয়ার্কে আপনার বিজনেস প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন।
২। এটি আপনার ব্যবসায়ের নামানুসারে একটি পার্সোনালাইজড ইউজার নেম দেয়।
৩। এখানে আপনার অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া লিংক যুক্ত করতে পারবেন। যেমন- পিন্টারেস্ট এর সঙ্গে আপনার ফেইসবুক প্রোফাইল যুক্ত থাকলে আপনি যখনই কোনো ছবি পিন করবেন, তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ফেইসবুকে শেয়ার করে দিবে। আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকলে এই সাইট থেকে ডুফলো ব্যাকলিংক পেতে পারেন।

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ